সুদীর্ঘ ২৩ বছরের বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পরিবেশনায়

অনলাইনে যাওয়া গ্রামবাংলার প্রথম পত্রিকা -ডেইলি স্টেটস্ ম্যান

বর্ধমান শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির মধ্যে অন্যতম বিসি রোড, বর্ধমান স্টেশন রোড, বীরহাটা মোড়, কার্জন গেট সংলগ্ন এলাকা, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন রাস্তা, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কালনা রোড এবং জি.টি. রোড -- এইসব জায়গায় রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এছাড়াও, এই শহরের অসংখ্য লেন, বাই লেনগুলিরও অবস্থা আরও করুণ। কোথাও বড় বড় গর্ত, কোথাও পিচ উঠে গিয়ে কংক্রিট বেরিয়ে এসেছে, কোথাও আবার জল জমে থাকে দিনের পর দিন। বর্ষাকালে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। প্রাণঘাতী আশঙ্কা হয়ে যায় গাড্ডায় জমে থাকা জলে। সাধারণ মানুষ, ßুñল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, এমনকি প্রশাসনিক গাড়িও এই ভাঙা রাস্তায় চলতে গিয়ে বিপাকে পড়ে।

এই ভাঙা রাস্তার সাতকাহন দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকারের চোখে অবশ্য এসব পড়ে না। অভিযোগ জানালেই তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাট ভালই আছে। অল্পবিস্তর যা খারাপ আছে তা শীঘ্রই সারানো হবে’। স্থানীয় বিধায়ক রাস্তা সারানোর জন্য ‘তারিখ পে তারিখ’ দেন। পরেû দেখা যায়, সবই ফাঁকা আওয়াজ। আসলে রাস্তা সারানোর বিষয়টি বেশ ‘লাভজনক প্রকল্প’ অনেকের কাছে। রাস্তার অপরিকল্পিত নির্মাণও যেটুকু হয় তার রক্ষণাবেক্ষণের অভাব প্রচুর। অনেক সময় রাস্তা নির্মাণের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। ঠিকাদারদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশে কাজের মান খারাপ হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, ফাল রাস্তা হবে কি করে? রাস্তার কাজ করতে গিয়ে এলাকা সহ ‘অনেকগুলি হাত ভরতে হয়’। ফলে, সারানোর কয়েক মাসের মধ্যেই রাস্তা ভেঙে যেতে শুরু করে। এছাড়া আছে জলনিকাশি ব্যবস্থার দুর্বলতা। বর্ধমান শহরের অধিকাংশ রাস্তায় সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ফলে, বর্ষাকালে জল জমে থাকে, যা রাস্তার পিচ ও কংক্রিটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর উপর আছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ।

বর্ধমান শহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, কালনা, কাটোয়া এইসব জায়গার সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাগুলি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। এই অতিরিক্ত চাপ রাস্তার আয়ু কমিয়ে দেয়।

স্থানীয় পুরসভা বা জেলা প্রশাসন অনেক সময় সমস্যার গুরুত্ব বুঝেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। বর্ষার আগে রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা হয় না, বর্ষার পরে সংস্কার হয় অনেক দেরিতে।

ভাঙা রাস্তার প্রভাব নাগরিক জীবনে বহুমাত্রিক। প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। বাইক, সাইকেল, অটো, এমনকি পায়ে হাঁটা মানুষও গর্তে পড়ে আহত হন। জল জমে থাকা রাস্তা মশার প্রজননক্ষেত্র হয়ে ওঠে। ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগবালাইয়ের আশঙ্কা বাড়ে। অর্থনৈতিক ভাবে যানবাহনের ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে গন্তব্যস্থলে দেরিতে পৌঁছানো, জ্বালানি অপচয় -- সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ে। ßুñল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন এই ভাঙা রাস্তায় চলতে গিয়ে বিপদে পড়তে হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে তাদের যাতায়াত হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। জরুরি পরিষেবায়ও বিঘ্ন ঘটে। অ্যাম্বুলেন্স, দমকল, পুলিশ -- এইসব জরুরি পরিষেবা ভাঙা রাস্তার জন্য সময়মতো অকুস্থলে পৌঁছাতে পারে না, এবং প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ে।

বর্ধমান পুরসভা, জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। অনেক সময় রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার হয় না। আবার কোথাও কোথাও রাস্তা খুঁড়ে রেখে দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সমস্যা আরও বাড়ে।

নাগরিকদের অভিযোগের পরেও ‘আশ্বাস ও তারিখ’ ছাড়া অনেক সময় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাটমানির দ্বন্দ্বের কারণেও উন্নয়ন থমকে যায়।

স্থানীয় সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভাঙা রাস্তার ছবি ও ভিডিও প্রায় প্রতিদিনই ভাইরাল হয়। নাগরিকরা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিছু জায়গায় স্থানীয় যুবসমাজ রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মিছিল, পথসভা, এমনকি রাস্তার গর্তে ধান রোপণের মতো প্রতীকী প্রতিবাদও করেছে।

রাস্তা মেরামতের ঠেকা কাজের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে না। শুধু বর্ষার আগে রাস্তা সংস্কার নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে, যাতে রাস্তার আয়ু অন্তত ৫-১০ বছর হয়। মানসম্পন্ন নির্মাণ ঠিকাদারদের কাজের মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জলনিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রতিটি রাস্তার পাশে সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে জল জমে না থাকে। নাগরিক অংশগ্রহণ নাগরিকদের অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হেল্পলাইন বা অ্যাপ চালু করা যেতে পারে, যেখানে ছবি তুলে প্রশাসনকে জানানো যাবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং উন্নয়নের প্রতি সদিচ্ছা থাকলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বর্ধমান শহর তার ঐতিহ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং সংßৃñতির জন্য পরিচিত। এই শহরকে যদি সত্যিই একটি আধুনিক, বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন অপরিহার্য। নাগরিকদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভাঙা রাস্তা শুধু একটি ভৌত সমস্যা নয়, এটি কার্যত প্রশাসনিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং নাগরিক অধিকার হরণের সামিল। এই সমস্যার সমাধান হলে বর্ধমান শহর সত্যিই কৃষি ও শিল্পের শহর হিসেবে গর্ব করতে পারবে।

কিন্তু বর্ধমান শহরের ভাঙা রাস্তা নাগরিকদের কাছে এখন একটা নীরব যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যন্ত্রণা শুধু গর্তে পড়ে যাওয়া নয়, এটি নাগরিক জীবনের প্রতিদিনের লড়াই। প্রশাসন, রাজনীতি এবং নাগরিক সমাজ;এই তিনের সম্মিলিত প্রয়াসেই সম্ভব একটি সুন্দর, নিরাপদ এবং উন্নত বর্ধমান গড়ে তোলা। সময় এসেছে, এই সমস্যার বিরুদ্ধে নাগরিকদের রুখে দাঁড়ানোর যাতে পৌর ও জেলা এই শহরকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়।

বর্ধমান শহরের ভাঙা রাস্তা: নাগরিক জীবনের এক নীরব যন্ত্রণা!

নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্ধমান একটি ঐতিহাসিক শহর, যেখানে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, কৃষি উন্নয়ন এবং শিক্ষার আলো এখানে একত্রে মিশে আছে। কিন্তু এই শহরের রাস্তাঘাটের অবস্থা সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শহরের বিভিন্ন অংশে ভাঙা, খোঁড়াখুঁড়ি করা, জল জমে থাকা এবং ভাঙ্গাচোরা রাস্তা আজ নাগরিক জীবনের এক নিত্যদিনের যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই শহরে আদৌ কোনও পৌরসভা আছে কিনা তা নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা: গত ১২ আগস্ট বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলার জুনিয়ার হাইস্কুল, হাইস্কুল ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের নোডাল টিচারদের নিয়ে ‘বিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, শিশু অধিকার ও পকসো আইন’ শীর্ষক একটি শিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়।

শিবিরে ৮৫০ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা ও ৫০ জন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ও সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রশিক্ষণ নেন। শিবিরে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক নানা সমস্যা ও তার প্রতিকার, শিশুদের অধিকার ও পকসো আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন পশ্চিùমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান তুলিকা দাস, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সপ্তর্ষি অধিকারী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রধান খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথারিটির সেক্রেটারি সুতপা মল্লিক।

শিবিরে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েসা রানী এ আইএএস, অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) প্রতীক সিং আইএএস, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রসেনজিৎ দাস, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার, জেলা শিক্ষা আধিকারিক ডঃ পৌষালী চক্রবর্তী, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবব্রত পাল, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) প্রলয়েন্দু ভৌমিক প্রমুখ।

শিশু অধিকার ও পকসো আইন শিক্ষণ শিবির

বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে মন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা: পরিকল্পনা করেই বাংলার সর্বনাশ করতে চাইছে। দামোদর নদী থেকে ব্রাপক পরিমাণ জল ছেড়ে চাষের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। গ্রামবাংলার বহু পরিবারকে গৃহহীন করেছে।

গত ৩ আগস্ট পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না-২ ব্লকের বড়বৈনান গ্রাম পঞ্চায়েতের আদমপুর গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আরো বলেন, বাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকার মানুষজনের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছেন, আর কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ডিভিসি নদী থেকে জল ছেড়ে মানুষকে গৃহহীন করেছে।

এদিন মন্ত্রীর সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকা পারদর্শন করেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা শাসক আয়েশা রানী এ, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার, পুলিশ সুপার সায়ক দাস, বিধায়ক খোকন দাস, শম্পা ধাড়া, অলোক মাঝি, রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী প্রমুখ।

About Haatebazare Patrika

Your trusted Bengali newspaper from Bardhaman, delivering news and articles for over 23 years.

Subscribe to Haatebazare Patrika

Stay updated with the latest Bengali news.